স্বত্ব © 2025 দৈনিক পত্রিকা |
সম্পাদক ও প্রকাশক: উবায়দুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ জুয়েল মিয়া প্রতিষ্ঠাতা: পি বা লিজন।সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়- পাইকপাড়া,লোকনাথ দিঘীর পাড়,পৌর কমিউনিটি সেন্টার ২য় তলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।দৈনিক পত্রিকা অনলাইন নিউজ পোর্টাল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃক নিবন্ধনের জন্য প্রক্রিয়া দিন।newsdainikpatrika@gmail.com মোবাইল নাম্বার 01751406352,01715958768
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় আবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হচ্ছে। আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটির পর, প্রথম কর্মদিবস থেকে নতুন এ অফিস সময়সূচি কার্যকর হবে। আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।বাংলাদেশে স্বাভাবিক সময়ে অফিস চলত সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। কিন্তু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত করা হয়। এখন আবার আগের সময়ে ফিরছে অফিস সময়।এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অফিস চলবে। তবে দুপুর একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজের জন্য বিরতি থাকবে। আর শুক্রবার ও শনিবার ছুটি থাকবে। এখন কী কারণে অফিস সময় পুননির্ধারণ করা হলো, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটিই তো স্বাভাবিক ছিল। দিনে ৮ ঘণ্টা কাজ হবে। পাঁচদিনে ৪০ ঘণ্টা। এতদিন ৩৫ ঘণ্টা কাজ হতো, কিন্তু সেটি বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। এখন আবার মূল অবস্থায় আসা হলো।
মাহবুব হোসেন বলেন, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে শাহবাগ থানা স্থানান্তরিত হচ্ছে। এখন শাহবাগ থানার নতুন ঠিকানা হবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পার্শ্ববর্তী রমনা মৌজার সাকুরা রেস্টুরেন্ট এলাকায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের জন্য এটি সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রমনা মৌজার ৩৫ নম্বর দাগে ৩৯ দশমিক ৭ শতক জমি আছে সেই জায়গায় হবে শাহবাগ থানা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুবিধার্থে ওই জায়গাটি (শাহবাগ থানার বর্তমান জায়গা) তাদের দরকার। তারা উপস্থাপন করেছে এ নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যে সমন্বয় করার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু তারা একমত হতে পারছিলেন না। সে জন্য মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছে এবং মন্ত্রিসভা নির্দেশনা দিয়েছে। কতদিনের মধ্যে স্থানান্তর হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হবে।
এ ছাড়া আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইনের খসড়া, জাতীয় জীবনিরাপত্তা নীতি-২০২৪ এর খসড়াসহ আরও কয়েকটি বিষয় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সূত্র:বাসস
মো. রুবেল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মাজেদা বেগমের তৈরি নানান রকমের শতাধিক রকমের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খেতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসছেন পিঠা প্রিয় মানুষজন। উপজেলার বাহেরচর বাজারের পিঠা দোকান কেন্দ্র করে কাস্টমারদের সমাগমে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হয় তার দোকানে। মাসে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার পিঠা বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।মাজেদা বেগমের বয়স ৫০ ছুই ছুই, দীর্ঘ ৯বছর যাবৎ স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে চিতই পিঠা বানিয়ে সংসার চালান। অভাবে সংসারে ৫ মেয়ে ও দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে কোনরকম দিন কাটে। প্রতিদিন ৮টি চুলায় ১ হাজারেরও বেশি চিতই পিঠা তৈরি করেন। প্রতিটি চিতই বিক্রি হয় ১০ টাকায়। তবে ডিম ও মসলাসহ স্পেশাল ডিম পিঠা বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। পিঠার সঙ্গেই ১০০ পদের ভর্তা ফ্রি দেয়া হয়। যার যতবার খুশি ভর্তা নিতে পারবে। ১০০ পদের ভর্তা বানানোর জন্য ১২-১৩ রকমের শুঁটকি, বিভিন্ন রকমের মাছ, কয়েক রকমের ডাল, বাদাম, ধনেপাতা, মরিচ, মৌসুমি সবজি ব্যবহার করেন তিনি।অভিনব কায়দায় কাস্টমারদের পিঠার প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলার জন্য মাজেদা বেগম কাস্টমারদের দিকে পিঠা ছুড়ে মারে, সেই পিঠা কাস্টমাররা ক্যাচ নিয়ে সানন্দে বিভিন্ন পদের ভর্তা মিশিয়ে খেয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। তার এই চিতই পিঠার দোকানকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ৫০-১০০ জন মানুষের জটলা লেগে থাকে। আড়াইহাজার থেকে পিঠা খেতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় চিতই পিঠা পাওয়া গেলেও ১০০ পদের ভর্তা পাওয়া যায় না। তাই আমরা নানান রকমের ভর্তার স্বাদ নিতেই আমরা এখানে আসছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাজেদা আপার পিঠা বানানো দেখে বন্ধুবান্ধবসহ এসেছি।পার্শ্ববর্তী নরসিংদী উপজেলা থেকে পিঠা খেতে আসা ইমরান হোসেন বলেন, আমরা পাঁচটি মোটরসাইকেল নিয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে এখানে পিঠা খেতে এসেছি। বাঞ্ছারামপুরের ফেসবুক বন্ধুর পোস্টের মাধ্যমে ৯০ থেকে ১০০ পদের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খাওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। চিতই পিঠা দিয়ে টাটকা ভর্তার স্বাদ বেশ ভালই লেগেছে।মাজেদা বেগমের স্বামী মোঃ রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, আমার পাঁচ মেয়ে, নয় বছর যাবত পিঠা বানানোর ব্যবসা করে দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছি, তিন মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে। আমাদের সংসার ভালই চলতেছে আমরা বেশ আনন্দে আছি। অনেক থানার মানুষ আমার এখানে পিঠা খেতে আসে। মানুষ আনন্দ পায় আমরাও বেশ সুখে আছি। মাজেদা বেগম বলেন, আগে পরিবারে অভাব-অনটন ছিল। এখনকার অবস্থা অনেক ভালো। ৩ বছর ধরে তার পিঠার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। তবে নয় বছর যাবৎ আমি পিঠা বিক্রি করছি। আমি প্রথমে ৫০০০ টাকা বুজি নিয়ে পিঠা বিক্রি শুরু করলেও এখন আমি বেশ ভালো আছি। নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ,হোমনা,দাউদকান্দিসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পিঠা খেতে আসে। শুক্রবারে ভিড় থাকে বেশি। শুক্রবারের দ্বিগুণ চালের পিঠা বিক্রি হয়।
ঢাকা বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই কেবল দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। নগরীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই কেবল জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের সেবা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটাই আওয়ামী লীগের মূলমন্ত্র।আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে জনগণ সুবিধা পায় এবং জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, এটা প্রমাণিত সত্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই, আজ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছে।বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে না দেয়া হবে না বলে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “আমি জানি অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন ও শফিউল আলম নাদেল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বেগম আক্তার জাহান, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, ঢাকা উত্তর মহানগর সভাপতি বজলুর রহমান প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।
১৯৪৯ সালের এই দিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠিত হয়, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হয়। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে পরিবর্তন কখনোই আসত না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি গৃহহীন ব্যক্তিকে একটি বাড়ি দেওয়ার লক্ষ্যে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “বাংলাদেশে কেউ ভূমিহীন থাকবে না, কেউ গৃহহীন থাকবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, তার সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দিচ্ছে। এমনকি বিনামূল্যে ইনসুলিনও দেওয়া শুরু হয়েছে। “তার মানে, আমরা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং শিক্ষার মতো মানুষের প্রতিটি মৌলিক চাহিদা পূরণ করছি। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছি।উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়াস অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির ধারাবাহিকতার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।কোভিড-১৯, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, “(দেশের মানুষ) একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আমি এটা জানি। মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি।শেখ হাসিনা দেশের ধনী ব্যক্তিদের আশেপাশে বসবাসতারী যারা একটু দরিদ্র তাদের প্রতি খেয়াল রাখার আহ্বান জানান।তিনি বলেন, “কেউ যেন অস্বাস্থ্যকরভাবে জীবনযাপন না করে। আমরা প্রত্যেককে একটি সুন্দর বাড়ি এবং একটি সুন্দর জীবন দেব।” এটি হবে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার। একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন,জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি এবং আমরা এটি বাস্তবায়ন করব। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছি আজকের বাংলাদেশে মানুষ নুন ভাতের বদলে ভাত মাংস খেতে চায়। অন্তত, আমরা এই উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের পরিকল্পিত উন্নয়ন ঘটাতে শুরু করে। তিনি দেশের বিভিন্ন খাতে ও সামাজিক সূচকে তার সরকারের অর্জন এবং বিএনপি শাসনামল ও আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনামলের মধ্যে তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটের আকার ২০০৬ সালের মাত্র ৬১,০০০ কোটি টাকা থেকে ৭৬১,৭৮৫ কোটি টাকা, জিডিপির আকার মাত্র ৪.১৫ লাখ কোটি টাকা থেকে এখন ৫০.৩১ লাখ কোটি টাকা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ২০০৬ সালের ৫.৪০ শতাংশ থেকে ৭.২৫ শতাংশে (গড় ৬%) এডিপির আকার ২১,৫০০ কোটি টাকা থেকে ২৭৪,৬৭৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৫৪৩ মার্কিন ডলার তা থেকে ২,৮২৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যদিও এখন তা ২,৭৬৫ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাড়িয়েছিল যা বিএনপি শাসনামলে ছিল মাত্র ০.৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখনও ৩০.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রিজার্ভ রয়েছে। তিনি বলেন, রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২০০৬ সালের ১০.০৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫২.৯৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বার্ষিক রেমিট্যান্স প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ২৪.০৩ বিলিয়ন ডলার যা বিএনপির আমলে ছিল ৪.৮ বিলিয়ন ডলার। রাজস্ব সংগ্রহ ৩৭,৮৭০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০,০০০ কোটি টাকার উপরে দাঁড়িয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্যের হার বিএনপি শাসনামলে ছিল ৪১.৫১ শতাংশ থেকে থেকে কমে এখন ১৮.৭ শতাংশে, চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার ৪৯ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।তিনি বলেন, গড় আয়ু ৫৯ বছর থেকে ৭৩ বছর, বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩,০৭৮ মেগাওয়াট থেকে ২৫,২২৭ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে এবং ২০০৬ সালে মাত্র ২৮ শতাংশ থেকে জনসংখ্যার ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎ কভারেজের সুবিধাভোগী, স্যানিটারি ল্যাট্রিন কভারেজ ৯৭.৩২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।তিনি আরো বলেন, ৪৩.২৮ শতাংশ থেকে পানীয় জলের সুবিধাভোগী ৫৫ শতাংশ থেকে ৯৮.৮ শতাংশে, সামাজিক নিরাপদ কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ ২,১০৫ কোটি (৪ শতাংশ) থেকে ১২৬,২৭২ কোটি টাকা (বাজেটের ১৬.৫৮ শতাংশ) এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা বিএনপি শাসনামলের ২১,৪৯,৩৫৭ থেকে ১,৮,১২৩,৫৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫,৬৭২ থেকে ১১৮,৮৯১টি, খাদ্য উৎপাদন ২.৬১ কোটি মেট্রিক টন থেকে ৯.৮০ কোটি মেট্রিক টন, খাদ্যশস্য উৎপাদন ১.৮০ কোটি মেট্রিক টন থেকে ৪.৯২ কোটি মেট্রিক টনেদাঁড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ০.২৩ শতাংশ থেকে ৭৩.৫ শতাংশ, মোবাইল সিম সাবস্ক্রিপশনের সংখ্যা ১৯ মিলিয়ন থেকে ১৮৩ মিলিয়নে, ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ২০০ থেকে ৬৭০,০০০ জন, ডিজিটাল পরিষেবার সংখ্যা মুষ্টিমেয় কয়েকজন থেকে ২,১৮০ জনে উন্নীত হয়েছে। সরকারি ওয়েবসাইটের সংখ্যা মাত্র ৯৮টি থেকে ৫১,৬৭৮টি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আমলে গ্রামীণ সড়ক ৩ হাজার ১৩৩ কিলোমিটার থেকে ৮৯ হাজার ৮৭৪ কিলোমিটার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এর মানে আমরা বাংলাদেশে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছি।
পবিত্র ঈদুল আযহা মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালিত হয় এ উৎসব। ঈদুল আযহা কোরবানির ঈদ হিসেবেও পরিচিত। কোরবানি শব্দটির অর্থ ত্যাগ ও নৈকট্য। মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও মানবকল্যাণে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করাই মূলত ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদের তাৎপর্য।কোরবানির ইতিহাস সুপ্রাচীন। প্রায় চার হাজার বছর আগে হজরত ইব্রাহিম (আ) স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি করার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ পেয়েছিলেন। হজরত ইব্রাহিম (আ)-এর জীবনে সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ)। আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য তিনি তার প্রিয়তম পুত্রকেই কোরবানি করার প্রস্তুতি নেন। তিনি পুত্রকে মহান আল্লাহর নির্দেশের কথা জানান এবং পুত্র সানন্দে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে সম্মত হন। পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। এ ঘটনার অন্তর্নিহিত বাণী স্রষ্টার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও ত্যাগ স্বীকারের মধ্যেই ঈদুল আযহার এই আনন্দ নিহিত। তাই ঈদুল আজহা ত্যাগের মহিমায় ক্ষুদ্রতা ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মিলিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।এরই সূত্র ধরে গোটা মুসলিম জাহানে আজও চলে আসছে কোরবানির এই ধারা। এর ভেতর দিয়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের দিকে অগ্রসর হয় মুসলিম জাতি।কোরবানি মুসলিম উম্মাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যাঁদের ওপর জাকাত ওয়াজিব, তাঁদের ওপর কোরবানিও ওয়াজিব।পশু কোরবানির মাধ্যমে গরিব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বার্থত্যাগ, আত্মত্যাগ ও সম্পদত্যাগই হলো কোরবানি। কোরবানি শুধু একটি আনন্দ-উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও দর্শন। ঈদুল আযহা আত্মত্যাগের প্রেরণায় উজ্জীবিত এক অনন্য আনন্দ উৎসব। যে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণ মূর্ত হয় মানুষের জীবনে, তার জন্য চরম ত্যাগ স্বীকারের এক প্রতীকী আচার এই কোরবানি।ঈদুল আযহার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিজের অহমিকা ও উচ্চাভিলাষ উৎসর্গ করা। পশু কোরবানির ভেতর দিয়ে মানুষের ভেতরে থাকা পশুশক্তি, কাম-ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি রিপুকেই ত্যাগ করতে হয়। তাই শুধু পশু নয়, প্রয়োজন পশুত্বের কোরবানি। কোরবানিদাতা শুধু পশুর গলায় ছুরি চালান না, তিনি তাঁর সব কুপ্রবৃত্তির ওপরও ছুরি চালিয়ে তাকে নির্মূল করেন। এটাই হলো কোরবানির মূল শিক্ষা। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে এ অনুভূতি অবশ্যই প্রয়োজন।এমন একসময়ে ঈদুল আযহা উদযাপিত হতে যাচ্ছে, যখন সমাজ ক্রমেই অস্থিরতা ও নিষ্ঠুরতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই সংঘাত-সংঘর্ষের মনোবৃত্তি ত্যাগ করে মানুষে মানুষে সৌভ্রাতৃত্ব তৈরি করতে হবে। সব ক্ষেত্রে ত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।রাজধানী’সহ সারা দেশে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ বন্যাপীড়িত। অনেক ঈদগাহ হয়তো পানির নিচে তলিয়ে আছে। ওই সব এলাকার মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা স্মরণ করে মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরির অঙ্গীকার করতে হবে।বিত্তবৈভবের প্রতিযোগিতা ও মহড়া না দেখিয়ে দুস্থ ও দুর্গত মানবতার পাশে দাঁড়ানো এ সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় সেবার মানসিকতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে দুস্থ ও আর্তমানুষের পাশে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮টি গবাদিপশু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। গত বছর সারাদেশে কোরবানিকৃত গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি। গত বছরের তুলনায় এবার ৩ লাখ ৬৭ হাজার ১০৬টি গবাদিপশু বেশি কোরবানি দেওয়া হয়েছে।এ বছর সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে এবং সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে।
মাঠ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে ২৫ লাখ ২৯ হাজার ১৮২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৫২০টি, রাজশাহী বিভাগে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ১১১টি, খুলনা বিভাগে ১০ লাখ ৮ হাজার ৮৫৫টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪৩৮টি, সিলেট বিভাগে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪২টি, রংপুর বিভাগে ১১ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৩টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫১৭টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে।
কোরবানি হওয়া গবাদিপশুর মধ্যে ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫৯টি গরু, ১ লাখ ১২ হাজার ৯১৮টি মহিষ, ৫০ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৯টি ছাগল, ৪ লাখ ৭১ হাজার ১৪৯টি ভেড়া এবং ১ হাজার ২৭৩টি অন্যান্য পশু।
এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৯৫৪টি গরু, ৬ হাজার ৪৬৫টি মহিষ, ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭২টি ছাগল, ৮৯ হাজার ৯১টি ভেড়া ও অন্যান্য ৮শ’টি পশু, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৭টি গরু, ৯১ হাজার ৮১০টি মহিষ, ৬ লাখ ৫২ হাজার ১৩০টি ছাগল, ৯৫ হাজার ৪৮৩টি ভেড়া ও অন্যান্য ৩৫০টি পশু।
রাজশাহী বিভাগে ৭ লাখ ২০ হাজার ৪৭২টি গরু, ৯ হাজার ৫৬৮টি মহিষ, ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ৪৮৬টি ছাগল ও ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭৭টি ভেড়া, অন্যান্য পশু ৮টি, খুলনা বিভাগে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৬৭টি গরু, ১ হাজার ৫০৬টি মহিষ, ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৭৩৫টি ছাগল, ৫৭ হাজার ৫৫৯টি ভেড়া ও অন্যান্য ৮৮টি পশু। বরিশাল বিভাগে ২ লাখ ৮০ হাজার ৩৭৭টি গরু, ১ হাজার ১টি মহিষ, ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৬৩টি ছাগল ও ২০ হাজার ১৯০টি ভেড়া, অন্যান্য পশু ৭টি। সিলেট বিভাগে ২ লাখ ১ হাজার ১৪৩টি গরু, ১ হাজার ৩৫৮টি মহিষ, ১ লাখ ৭৩ হাজার ২২৩টি ছাগল ও ১৮ হাজার ১৪টি ভেড়া, অন্যান্য পশু ৪টি। রংপুর বিভাগে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৪ টি গরু, ৩০৪টি মহিষ, ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬১৬টি ছাগল, ৬০ হাজার ২২৮টি ভেড়া, অন্যান্য পশু ১১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ লাখ ৯০ হাজার ৮০৫টি গরু, ৯০৬টি মহিষ, ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৪টি ছাগল ও ১৮ হাজার ৭টি ভেড়া, অন্যান্য পশু ৫টি কোরবানি দেওয়া হয়েছে। সূত্র বাসস