রমজানের শেষ ১০ দিনের ফজিলত -হাজী জসিম উদ্দিন জমসেদ

Adithay Kamal শিল্প সাহিত্য, 11 October 2023, 627 Views,

পবিত্র রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা লাভের আর শেষ ১০ দিনে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির। এ জন্য আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এবং রাসুল (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিনের প্রতি অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। সেই সঙ্গে নানা নফল ইবাদত দিয়ে শেষ ১০ দিনকে সমৃদ্ধ করেছেন। মুসলিম উম্মার জন্য পবিত্র রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই রহমত বর্ষণ হয়। সবচেয়ে বেশি রহমত থাকে রমজানের শেষ দশ দিন। এই ১০ দিনের মধ্যেই রয়েছে পবিত্র শবেকদর।

এ সময়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ আমল করার নিয়ম আছে।

রমজানুল কারিমের শেষ ১০ দিনের ১০টি মাসনুন আমল-
* রমজানের সাধারণ আমলগুলো এই দশকে আরও বেশি গুরুত্বের সঙ্গে সম্পাদন করা।
* ইতিকাফ করা।
* ইবাদতের জন্য রাত্রিজাগরণ করা।
* পরিবারের সদস্যদের রাত্রিজাগরণে উদ্বুদ্ধ করা।
* কোমর বেঁধে ইবাদতে মশগুল হওয়া বা ইবাদতের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
* অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ইবাদতের জন্য অধিক পরিমাণ সাধনা করা।
* প্রতি রাতে বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদরের আশায় ইবাদত করা।
* শবেকদরের দোয়া পড়া। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।
* ঈদের চাঁদ অনুসন্ধান করা ও চাঁদ দেখার দোয়া পড়া।
* সাদকাতুল ফিতর আদায় করা।
সহিহ বুখারি শরিফের একটি হাদিসে রোজার শেষ দশ দিন সম্পর্কে আয়েশা (রা.) বলেছেন, শেষ দশ দিন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবিজি (সা.) ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন এবং পরিবারের সদস্যদের ও সারারাত জেগে ইবাদত করতে বলতেন।

রমজানের শেষ দশকের ফজিলত ও তাৎপর্য রমজান মাসের শেষ দশকের বিশেষ ফজিলত রয়েছে এবং আছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। এগুলো হল :

* এ দশ দিনের মাঝে রয়েছে লাইলাতুল কদর নামের একটি রাত। যা হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। যে এ রাতে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।

* নবী করিম (সাঃ) এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি সময় ও শ্রম দিতেন, যা অন্য কোন রাতে দেখা যেত না। যেমন মুসলিম শরীফে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, তিনি এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সেহরি গ্রহণ করতেন।

* রমজানের শেষ দশক আসলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন।

* এ দশদিনের একটি বৈশিষ্ট্য হল, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এ শেষ দশদিনে মসজিদে এতেকাফ করতেন। প্রয়োজন ব্যতীত তিনি মসজিদ থেকে বের হতেন না। লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে সকল রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন।

তিনি তার কালামে এ রাতকে প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর কালাম সম্পর্কে বলতে যেয়ে এরশাদ করেন: ‘আমি তো ইহা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনিতে। আমি তো সতর্ককারী। এ রজনিতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।’ [সূরা আদ-দুখান : ৩-৪]

সূরা আল-কদর এ সুরাতে যে সকল বিষয় জানা গেল তা হল:

* এ রাত এমন এক রজনি যাতে মানবজাতির হেদায়াতের আলোকবর্তিকা মহা গ্রন্থ আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।
* এ রজনি হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ তিরাশি বছরের চেয়েও এর মূল্য বেশি।
* এ রাতে ফেরেশতাগণ রহমত, বরকত ও কল্যাণ নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে থাকে।
* এ রজনি শান্তির রজনি। আল্লাহর বান্দারা এ রাতে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে শান্তি অর্জন করে থাকে।
* সময়ের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। এ আয়াতগুলোতে অল্প সময়ে বেশি কাজ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হল। যত সময় বেশি তত বেশি কাজ করতে হবে। সময় নষ্ট করা চলবে না।
* গুনাহ ও পাপ থেকে ক্ষমা লাভ। এ রাতের এই ফজিলত সম্পর্কে বোখারি ও মুসলিম বর্ণিত হাদিসে এসেছে নবী করিম (সা:) বলেছেন: যে লাইলাতুল কদরে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সালাত আদায় ও ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [বোখারি ও মুসলিম]

হাদিসে এসেছে: ‘যে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করতে চায় সে যেন শেষ সাত দিনে অন্বেষণ করে।’ [বোখারি ও মুসলিম]

অধিকতর সম্ভাবনার দিক দিয়ে প্রথম হল রমজান মাসের সাতাশ তারিখ। দ্বিতীয় হল পঁচিশ তারিখ। তৃতীয় হল ঊন ত্রিশ তারিখ। চতুর্থ হল একুশ তারিখ। পঞ্চম হল তেইশ তারিখ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে গোপন রেখেছেন আমাদের উপর রহম করে।

তিনি দেখতে চান এর বরকত ও ফজিলত লাভের জন্য কে কত প্রচেষ্টা চালাতে পারে। লাইলাতুল কদরে আমাদের করণীয় হল বেশি করে দোয়া করা।

আয়েশা (রাঃ) নবী করিম (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, লাইলাতুল কদরে আমি কি দোয়া করতে পারি? তিনি বললেন: ‘হে আল্লাহ ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ [ তিরমিজি]

আল্লাহ আমাদের রমজানে শেষ ১০ দিনে আমল সঠিকভাবে করা সক্ষমতা দান করুন। আমিন।

লেখক: হাজী জসিম উদ্দিন জমসেদ, দৈনিক মাতৃজগৎ