স্বত্ব © 2025 দৈনিক পত্রিকা |
সম্পাদক ও প্রকাশক: উবায়দুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ জুয়েল মিয়া প্রতিষ্ঠাতা: পি বা লিজন।সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়- পাইকপাড়া,লোকনাথ দিঘীর পাড়,পৌর কমিউনিটি সেন্টার ২য় তলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।দৈনিক পত্রিকা অনলাইন নিউজ পোর্টাল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃক নিবন্ধনের জন্য প্রক্রিয়া দিন।newsdainikpatrika@gmail.com মোবাইল নাম্বার 01751406352,01715958768
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষে লন্ডন থেকে আজ ঢাকায় পৌঁছেছেন।প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট (বিজি-২০৮) আজ বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী বিমানের প্রতিটি কোনায় ঘোরাফেরা করেন। তিনি যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের সঙ্গে ছবিও তোলেন।প্রধানমন্ত্রী যাত্রীদের সঙ্গে বেশকিছু সময় কাটান। এই সময় কয়েকজনকে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং তাঁর সাথে সেলফি তোলেন। কয়েকজন নারী যাত্রীকে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতেও দেখা গেছে।এর আগে বিমানটি লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে (লন্ডন সময়) যাত্রা করে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি বিমানে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে পৌঁছান।লন্ডনে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শেখ হাসিনা বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে দেয়া এক সংবর্ধনায় যোগদেন এবং বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা বিষয়ে গঠিত এপিপিজি’র সভাপতি এবং যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী রুশনারা আলী এমপি’র নেতৃত্বে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের (এপিপিজি) একটি প্রতিনিধিদলসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্টজন তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।নিউইয়র্কে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী ১৭-২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশন এবং এর ফাঁকে অন্যান্য উচ্চ-পর্যায়ের ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে শেখ হাসিনা ২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন। সুত্রঃ বাসস
জুয়েল মিয়া,নিজস্ব প্রতিনিধি
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে অতীতে বিএনপি ও তাদের হোতারা তামাশা করেছে। আওয়ামী লীগ কোনো দিন নির্বাচন নিয়ে তামাশা করে নাই এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সঠিকভাবে করে দেবে মঙ্গলবার(২৭ জুন)সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে এসব কথা বলেন তিনি।
গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সরকার তামাশা করছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের করা এমন মন্তব্যের জবাবে আনিসুল হক বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভ্যাস হচ্ছে উদ্ভট উদ্ভট কথা বলা। আর নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এবং বিএনপির যারা হোতা তারাই তামাশা করছেন অতীতে।এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন, কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভূঁইয়া জীবন, আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, , সাধারণ সম্পাদক তাকজিল খলিফা কাজল, পৌর যুবলীগের সভাপতি মনির খান, ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন বেগ শাপলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ঢাকা থেকে আন্তনগর মহানগর প্রভাতি ট্রেনযোগে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন পৌঁছালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নিজের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। কসবা ও আখাউড়ায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে মন্ত্রীর।
এ ছাড়া ভারত, শ্রীলংকা, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এদের কার্যক্রম প্রসারিত করে প্রতারণা করেছে। ওইসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ব্যাপকভাবে প্রতারিত হয়েছেন। তারা রেমিট্যান্সের অর্থের একটি অংশ এমটিএফইতে বিনিয়োগ করে এখন তা তুলতে পারছেন না। সংশ্লিষ্টদের ধারণা- করোনার পর অনেক কর্মী বিদেশে গেলেও দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে না। এমটিএফইতে বিনিয়োগ করার কারণেই দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৪০০ সিইওর নাম সংগ্রহ করেছে। এখন তাদের অবস্থান ও ঠিকানা সংগ্রহ করার কাজ চলছে। শনাক্ত করা হলে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তাদেরকে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে হস্তান্তর করা হবে। তখন বিএফআইইউ থেকেও এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। এদিকে বিএফআইইউ বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরেজমিনের পাশাপাশি ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিলে একটি পোস্টে এমটিএফই দাবি করেছে, তারা এখন পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি ডলার লেনদেন করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২২ লাখ কোটি টাকা। তবে দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তাদের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কুয়েত প্রবাসী এক ব্যক্তি প্রথম এমটিএফই-এর স্কিমের কথা কয়েকজনকে জানান। তার একজন আত্মীয়কে গ্রামে প্রতিনিধিও নিযুক্ত করেন। সেই প্রতিনিধির মাধ্যমে পরের কয়েক মাসে গ্রামের আড়াইশর বেশি মানুষ এতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হন। কুয়েতের ওই প্রবাসীও এতে মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেন। এছাড়া কুয়েতে আরও অনেক প্রবাসী এতে বিনিয়োগ করেছেন বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।
ভারত, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীরাও এতে বিনিয়োগ করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তারা এতে বিনিয়োগ করায় দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। এ ছাড়া এমটিএফই-এর মাধ্যমে হুন্ডিতে দেশে রেমিট্যান্সের অর্থও পাঠাত। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে। দেশের মানুষকে প্রভাবিত করতে এটি ইসলামি শরিয়তসম্মত একটা ব্যবসা বলেও প্রচার চালাত। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এটি দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হলেও ওয়েবসাইটে কানাডার অন্টারিওর একটি ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই ঠিকানায় এই প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো অফিস পাওয়া যায়নি। এই বছরের জুলাইয়ে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হলেও এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা দুবাই প্রবাসী বাংলাদেশি মাসুদ আল ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এমটিএফই-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দাবিদার মাসুদ আল ইসলামের ফেসবুক প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, তিনি এর আগে পিএলসি আলটিমার সদস্য সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। এটি ছিল আরেকটি এমএলএম ধরনের প্রতিষ্ঠান। এই পিএলসি আলটিমার বাংলাদেশে বেশকিছু গ্রাহক রয়েছে বলে গোয়েন্দা জানতে পেরেছে।
এমটিএফই-এর হিসাব ডলারে করা হলেও বিভিন্ন দেশ থেকে স্থানীয় মুদ্রায় হুন্ডিতে টাকা নেওয়া হতো। একটি পর্যায়ে তা মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হতো।
সালমান হোসাইন
জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে শুরু হলো বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী ও উপন্যাসিক, “তিতাস একটি নদীর নাম” নামক উপন্যাসের রচয়িতা অদ্বৈত মল্লবর্মণের স্মরণে ৩ দিনব্যাপী “ ২য় অদ্বৈত গ্রন্থমেলা-২০২৪। অদ্বৈত মল্লবর্মণের জন্মভিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার গোকর্ণঘাটে অদ্বৈত মল্লবর্মণ স্মৃতি গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে ” ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রি. মঙ্গলবার, বিকাল ৪টায় মেলা শুরু হয়।মেলার আহবায়ক ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কবি ও গীতিকার- মো. আ. কুদদূসের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন।বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি – গবেষক ও সংগঠক জয়দুল হোসেন, সভাপতি সাহিত্য একাডেমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। কবি ও প্রাবন্ধিক অশোকানন্দ রায়বর্ধন, ত্রিপুরা ভারত। শিশুসাহিত্যিক বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী, ত্রিপুরা ভারত। কবি ও গবেষক ড. বিপ্লব মণ্ডল, পশ্চিমবঙ্গ ভারত। মানবর্দ্ধন পাল, প্রাবন্ধিক ও গবেষক অতিথি অধ্যাপক ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বাহার মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব। মোঃ মনির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। মোঃ ফারুক আহমেদ, কাউন্সিলর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা। আলহাজ ফেরদৌসুর রহমান,সাবেক কাউন্সিলর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা। পরিমল ভৌমিক, প্রধান শিক্ষক গোকর্ণঘাট উচ্চ বিদ্যালয় প্রমুখ।কবি হেলার উদ্দিন হৃদয়ের সঞ্চালনায় উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন।বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী অদ্বৈত মল্লবর্মণ ” তিতাস একটি নদীর নাম ” তার অতুলনীয় এক সাহিত্যকর্ম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার গোকর্ণঘাটে নিজ জন্মভিটায় তাঁর স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় অদ্বৈত মল্লবর্মণ স্মৃতি গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র।
অদ্বৈত মল্লবর্মণ স্মৃতি গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্রের আয়োজনে ২০২৩ সালের ২০-২২ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছিল ‘অদ্বৈত গ্রন্থমেলা-২০২৩’। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ দিনব্যাপী ২০, ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ২য় অদ্বৈত গ্রন্থমেলা-২০২৪।এবারের মেলায় বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিথযশা কবি-সাহিত্যিকদের সম্মিলন ঘটেছে। মেলার তিনদিনেই অদ্বৈত মুক্তমঞ্চে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় সকল আবৃত্তি সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আবৃত্তি ও সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন থাকছে। তিনদিনব্যাপী এই মেলায় বইপ্রেমী সকল শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণ ঘটছে।মেলার সমাপনী দিন যথারীতি ঘোষণা করা হবে’ অদ্বৈত মল্লবর্মণ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪।
নিজস্ব প্রতিবেদক
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের অর্থায়ন নিশ্চিত করতে দেশীয় উৎসের তহবিলের পাশাপাশি বৈদেশিক তহবিল সংগ্রহের উপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের প্রবণতা বৃদ্ধি পেলে বিদেশী ঋণ বিতরণ বাড়বে, যা প্রকৃতপক্ষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি সমৃদ্ধ করবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী সভায় সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), এনবিআর এবং অর্থ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে আরও বেশি বৈদেশিক তহবিল এবং বৈদেশিক ঋণ ব্যবহৃত হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেছেন। মান্নান বলেন, উন্নয়ন সহযোগি যেমন বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং জাইকা বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু সরকার কেবলমাত্র তার প্রয়োজন মোতাবেক ও সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা নেবে। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানান, ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও অধিক বৈদেশিক সহায়তা বর্তমানে পাইপলাইনে রয়েছে
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, আজ একনেক সভায় মোট ১৬টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়, যার বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩৬২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১২ হাজার ৮৭৩ কোটি ১১ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ১১ হাজার ৪৭২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অনুমোদন পাওয়া ১৬ প্রকল্পের মধ্যে ৮টি নতুন এবং ৮টি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে। একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর আরও কিছু নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষকে মূল্যস্ফীতির ভোগান্তি থেকে রেহায় দিতে প্রধানমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি মনোযোগি হওয়ার কথা বলেছেন। সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনার উপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কৃষি সেচের পুরোটা পর্যায়ক্রমে সৌরচালিত পাম্পের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। সে বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি। সৌর প্যানেলের উচ্চতা বাড়ানোর নির্দেশ প্রদান করে শেখ হাসিনা বলেন, যেন সৌর প্যানেলের নীচের জমিতে পেঁয়াজ, আদা, হলুদ, মাছ চাষসহ সবজি চাষ করা যায়। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বেসরকারি খাত সোলার প্যানেল স্থাপনে এগিয়ে এলে, সরকার কর সুবিধাদিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। বর্ষাকালে হাওর অঞ্চলে বজ্রপাতে প্রায়ই মানুষের মৃত্যু হয় উল্লেখ করে মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী হাওর এলাকায় কিছু শেড নির্মাণের জন্য কৃষি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বিসিএস কর একাডেমির অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে কম জমি ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়নকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশ প্রদান করেন । সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, মূল্যস্ফীতির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাজারে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকা উচিত। সরকার সবর্তোভাবে সে বিষয়ে সচেতন। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশীয় উৎসের তুলনায় বিদেশী ঋণের সুদহার কম হওয়ায় বিদেশী অর্থায়ন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সরকার তার সক্ষমতার সর্বোচ্চটুকু করতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিদেশী ঋণ ও জিডিপি অনুপাত এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম, যেকারণে আমরা আরও বেশি বিদেশী ঋণ নিতে পারি। একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড সফর সফল হওয়ায় অভিনন্দন জানানো হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২ জরিপের ফলাফল সম্পর্কে অবহিত করা হয়। তিনি গড় আয়ু, স্বাক্ষরতার হার, নিরাপদ পানি পানের সুযোগ বৃদ্ধিসহ প্রকাশিত ফলাফলের বিষয়ে প্রশংসা করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প দেশের গৃহহীন মানুষকে অনেক সাহায্য করেছে, যা দেশে দারিদ্রতা কমাতে সহায়তা করছে। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, গরীব মানুষ উপকৃত হয় এমন প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশন অগ্রাধিকার দেবে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয়ে মান্নান বলেন, বর্তমান সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। একইসাথে আমদানি-রপ্তানি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম স্থিতিশীল থাকায় আগামী দিনে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, বিদেশি ঋণের মূল অর্থ ও সুদ পরিশোধে বাংলাদেশ কখনোই খেলাপি হয়নি। একনেক সভায় ৬ হাজার ৩৪৫ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ইমপ্রুভিং আরবান গর্ভন্যান্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার (আইইউজিআইপি)’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ৮টি বিভাগের ৪৮টি জেলার আওতাধীন ৮৭টি উপজেলার প্রায় ৮৮টি পৌরসভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। সভায় অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘সৌর বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের মাধ্যমে কৃষি সেচ’ প্রকল্প, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বিসিএস (কর) একাডেমির ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম পর্যায়)’ প্রকল্প, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘জার্মানির বার্লিনে বাংলাদেশ চ্যানসেরি কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্প, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প যথাক্রমে ‘সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরিগঞ্জ-হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা-জলসুখা সড়কাংশ নির্মাণ’ ও ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পথচারী আন্ডারপাস’ প্রকল্প, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ঈশ্বরদী-পার্বতীপুর সেকশনের স্টেশনগুলোর সিগনালিং ও ইন্টারলকিং ব্যবস্থার প্রতিস্থাপন ও আধুনিকীকরণ’ প্রকল্প, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘ইকোনমিক এক্সেলারেশন অ্যান্ড রেজিল্যান্স ফর এনইইটি (ইএআরএন)’ প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ’ প্রকল্প এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘গ্রামীণ মাটির রাস্তা টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ’ প্রকল্প। আর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৭টি প্রকল্প যথাক্রমে ‘তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ (সেক্টর)’ প্রকল্প, ‘ইমপ্রভিং আরবান গর্ভন্যান্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার (আইইউজিআইপি)’ প্রকল্প, ‘রুর্যাল কানেকটিভিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (আরসিআইপি)’ প্রকল্প, ‘চট্টগ্রাম বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প, ‘গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-চিলমারী উপজেলা সদর দপ্তরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প, ‘রাজশাহী বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প এবং ‘নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প।
সূত্রঃ বাসস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে মানবজাতির কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সকলকে একযোগে কাজ করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।তিনি বলেন, আজ আপনাদের সকলের কাছে, বিশ্ব নেতাদের কাছে আমার আবেদন, যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করুন এবং আমাদের জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থায়ী শান্তি, মানবজাতির কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার জাতিসংঘ সদর দফতরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন,করোনা মহামারি ও জলবায়ু সঙ্কটের প্রভাব এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য, অর্থায়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন-লক্ষ্যসমূহ অর্জনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে ।তিনি বলেন, বহুপাক্ষিক কূটনীতিকে জোরদারকরণ, জাতিসংঘের উপর অর্পিত দায়িত্বসমূহ পালন করার জন্য প্রচেষ্টা ও সাহসী বক্তব্য, এবং বৈশ্বিক সঙ্কট উত্তরণে সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবমূখী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সবসময় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসেকে সমর্থন জানায়।প্রধানমন্ত্রী ইউএনজিএ অধিবেশনে প্রদত্ত তাঁর ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য সংকট, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি), সন্ত্রাসবাদ এবং সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
গেল বারের মত এবারসহ মোট ১৯তম বারের মতো শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রদত্ত ভাষণের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন।এ বছরের ইউএনজিএ’র মূল প্রতিপাদ্য হলো : ‘আস্থা পুনর্গঠন ও বিশ্বব্যাপী সংহতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা: সকলের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্বের লক্ষ্যে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে ত্বরান্বিতকরণ পদক্ষেপ।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায় তুলে ধরে বলেন, “আমি নিজে নিপীড়িত এবং যুদ্ধ ও হত্যার নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যুদ্ধ, হত্যা, অভ্যুত্থান ও সংঘাতের ভয়াবহতার কারণে মানুষ যে বেদনা ও যন্ত্রণা সহ্য করে তা অনুভব করতে পারি।তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পিতা, জাতির পিতা ও বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন আমার মা, আমার তিন ছোট ভাই, দুই ভ্রাতৃবধূ, চাচাসহ পরিবারের মোট আঠার সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল।তিনি ও তাঁর ছোট বোন বিদেশে থাকায় সেই বর্বরতা থেকে বেঁচে যান বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এরআগে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ত্রিশ লাখ দেশবাসীকে হত্যা এবং দুই লাখ নারীকে নির্মম নির্যাতনের কথাও তিনি ভাষণে উল্লেখ করেন।আসুন আমরা রোহিঙ্গাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করি প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কেননা ইতোমধ্যেই তাদের বাস্তুচ্যুতির ছয় বছর পেরিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আমরা অস্থায়ীভাবে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু, পরিস্থিতি এখন আমাদের জন্য সত্যিই অসহনীয় হয়ে উঠেছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক হতাশার জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতি সম্ভাব্য মৌলবাদকে ইন্ধন দিতে পারে।এই অবস্থা চলমান থাকলে এটি আমাদের আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে বলেও আশংকা ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সেখানে তারা শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে আগ্রহী। আসুন আমরা এই নিঃস্ব মানুষের জন্য তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করি। উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের ০.৪৭% এরও কম অবদান রাখলেও বাংলাদেশ জলবায়ুজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি। এর সমাধানের লক্ষে জরুরি, সাহসী এবং উচ্চাভিলাষী সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।তিনি বলেন,“আমরা প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলিকে উচ্চাভিলাষী এনডিসি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানাই। উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের উন্নয়ন চাহিদার কথা বিবেচনা করতে হবে। আমরা ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তহবিলের জরুরি বাস্তবায়ন চাই।সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা, লবণাক্ততা, নদী ক্ষয়, বন্যা ও খরা-জনিত কারণে জলবায়ু-অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগাভাগির ক্ষেত্রে আমি আন্তর্জাতিক সংহতির আহ্বানও জানান তিনি।বাংলাদেশ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সংরক্ষণ এবং জলবায়ু-সহনশীল টেকসই উন্নয়নের পথ অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ সবুজ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বল্প-কার্বন নির্গমন কৌশল প্রণয়ন করছে। তাঁর সরকারের ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে এই তহবিলে এ পর্যন্ত ৪৮০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছি। জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনের লক্ষে সমুদ্র উপকূলে বাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার, গ্রিন বেল্ট এবং বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে।বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচ্যূত মানুষের জন্য বিশ্বের সবচেয় বড় আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে ৪ হাজার ৪০৯টি উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার পরিবারের ৫০ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে ঘর দেওয়া হয়েছে।তিনি বলেন, তাঁর সরকার ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়ন করছে। যার লক্ষ্য সমন্বিত ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি নিরাপদ, জলবায়ু সহনশীল এবং সমৃদ্ধ ডেল্টা অর্জন।প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ গ্রহণ করেছে বলেও উল্লেখ করেন।তিনি বলেন, আমরা ধীরে ধীরে একটি জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে জলবায়ু সহনশীল দেশে পরিণত হতে কাজ করছি। বাংলাদেশের ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহার করছে। আমরা আরও টেকসই শক্তির মিশ্রণের জন্য কাজ করছি। আমরা আশা করি, ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের শক্তির ৪০% পুনঃনবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া যাবে।আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক স্থাপন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে ‘ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ’ অকার্যকর হয় পড়েছে এবং এ ব্যবস্থার দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়াও, আমাদের মত দেশগুলোর জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে সারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া, উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের লক্ষ্যে হিমাগার নির্মাণের জন্য আমাদের বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমি জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য আঞ্চলিক ‘খাদ্য ব্যাংক’ চালু করার প্রস্তাব করছি। আমাদের অবশ্যই জলবায়ু-সহনশীল ফসলের গবেষণায় একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে।বিগত কয়েক বছরের আন্তঃসংযুক্ত সঙ্কটগুলি বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি এবং পণ্য মূল্য বৃদ্ধি করেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে আমাদের আমদানি বিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।তিনি বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, আমরা প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করেছি। আমরা নি¤œ আয়ের ১ কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী দামে চাল ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করছি।মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং দেশের সকল অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবানের উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০২২ সালে গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ গঠন এবং এর মাধ্যমে বৈশ্বিক খাদ্য, শক্তি এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে বিভিন্নমুখী সমাধান প্রদানের জন্য আমি জাতিসংঘ মহাসচিবকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।খাদ্যপণ্য রপ্তানি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বিদ্যমান সমস্যাসমূহের টেকসই সমাধান নিশ্চিত করার জন্য এই গ্রুপের অন্যতম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তিনি সব সময় জোর দিয়েছেন বলেও জানান।চলবে…. (সূত্র বাসস)