স্বত্ব © 2025 দৈনিক পত্রিকা |
সম্পাদক ও প্রকাশক: উবায়দুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ জুয়েল মিয়া প্রতিষ্ঠাতা: পি বা লিজন।সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়- পাইকপাড়া,লোকনাথ দিঘীর পাড়,পৌর কমিউনিটি সেন্টার ২য় তলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।দৈনিক পত্রিকা অনলাইন নিউজ পোর্টাল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃক নিবন্ধনের জন্য প্রক্রিয়া দিন।newsdainikpatrika@gmail.com মোবাইল নাম্বার 01751406352,01715958768
আদিত্ব্য কামাল,জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : জতীয় মানবাধিকার সোসাইটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার উদ্যোগে শতাধিক অসহায় পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া টেংকের পাড়স্থ পৌর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এ ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ খোকনের উপস্থাপনায় ও জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছেল সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এড. তানভীর ভূঁইয়া সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবি সমিতি।বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জনাব মো. হেলাল উদ্দিন সহ-সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগ, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা নুরুজ্জামান পরিচালক হযরত শাহজালাল দারুল সুন্নাহ মাদ্রাসা মনতলা, এড. মাহবুবুল আলম খোকন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জেলা আওয়ামীলীগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জনাব ইস্কান্দার আলী সহ-সভাপতি জেলা নাগরিক কমিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জনাব আবদুস সালাম সহ-সভাপতি জেলা নাগরিক কমিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জনাব আব্দুল মান্নান সরকার সাবেক সাধারণ সম্পাদক দি-আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, মজিদ-নাহার ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি সাংবাদিক জাকারিয়া জাকির, জনাব মো. তাজুল ইসলাম সদস্য জেলা নাগরিক কমিটি, এড. শেখ জাহাঙ্গীর আলম, সভাপতি পিস ভিশন বাংলাদেশ, ফরেষ্ট রেইঞ্জার জনাব মো. বশির আহমেদ, রুমানা আক্তার শ্যামলী সভানেত্রী জেলা জাতীয় মহিলা পার্টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদিত্ব্য কামাল সম্পাদক জনতার খবর প্রমূখ।
জুয়েল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্যের সাথে নবীনগর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম এর দুর্ব্যবহারের অডিও কলরেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে৷ এই ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বুধবার এই ঘটনা জানার পর স্থানীয় সাংবাদিক নেতৃত্ববৃন্দরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। জানা যায়, নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের ০৯নং ওয়ার্ড (ফতেহপুর) মেম্বার ও জাতীয় দৈনিক দেশ বাংলা পত্রিকার সাংবাদিক সফল আলী গত ২৩ জানুয়ারি তার আপন ছোট ভাই মোতালিবের বাসায় ও দোকানে দুইটি মিটার প্রয়োজন হওয়ায় নবীনগর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম মোরশেদ এর নিকট মুঠোফোনে এক সহকর্মীকে পাঠিয়ে সহযোগিতা কামনা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সেবা দেয়ার বিপরীতে ডিজিএম কর্কশ ভাষায় সাংবাদিককে ভবঘুরে, প্রশ্রয় দিলে মাথায় উঠে যান, আপনারা সেবা নিতে আসলে কি আমি আপনার জন্য বসে থাকব? এসব কথা বলে মন্তব্য করেন। এই কর্মকর্তা বদলি না করা পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ এর সকল সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার থেকে বিরত থাকার মত প্রকাশ করেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
এবিষয়ে সাংবাদিক সফর আলী জানান, আমি একজন জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক। আমার সাথে এমন আচরণ মোটেও কাম্য ছিল না। এমন ডিজিএমকে নবীনগর থেকে বদলি না করলে সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।
নবীনগর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম মোনোয়ার মোরশেদ ওই ফোনালাপটি অস্বীকার করেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
গেলো বছর (২০২৩) কিশোর অপরাধীদের হাতে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত বছরের ৯ জানুয়ারি জেলা শহরে ইজিবাইকের গতিরোধ করে আশিক নামের এক সাংবাদিককে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ৯ জানুয়ারি সোমবার সন্ধ্যার দিকে শহরের ফারুকী পার্ক সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং এর সক্রিয় সদস্য ঘাতক রায়হান আহমেদ সোহানকে জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ।
নিহত আশিকুর রহমান আশিক ‘দৈনিক পর্যবেক্ষণ’ পত্রিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। আশিক জেলা শহরের মেড্ডা এলাকার বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী আশরাফ উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় বাতিঘর নামের একটি মানবসেবামূলক সামাজিক সংগঠনের কর্মী ও ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাদক বিরোধী আন্দোলন’ এর সভাপতি ছিলেন। এবং জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সিফাত, সৌরভ, তৈয়ব, সাঈফ, রিজু’সহ মাদক বিরোধী প্রচার প্রচারণা চালাতেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম জানান, ‘বেওয়ারিশ লাশ স্বেচ্ছায় দাফন কাজের সঙ্গে জড়িত বাতিঘর নামক সংগঠনের মাসিক সভা ছিল শহরের ফারুকী পার্কে। সেখান থেকে সভা শেষ করে শহরে ফেরার পথে মাদকাসক্ত রায়হান’সহ আরও ৪-৫ জন আশিককে বহনকারী ইজিবাইকের গতিরোধ করে বুকের বাম পাশে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
গেলো বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা থেকে আরাফাত হোসেন (১৬) নামের এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আরাফাতের পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে আরাফাতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে জেলা শহরের ট্যাঙ্কের পাড় এলাকার বাসিন্দা।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, আশুগঞ্জের লালপুর এলাকার সৌদি প্রবাসী নোমানের পরামর্শে ইয়াছিন ও হযরত নামের দুই কিশোর পরিকল্পিতভাবে আরাফাতকে হত্যা করেছে। ঘটনার আগের দিন সকালে আরাফাত জন্মনিবন্ধনের কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরের দিন বৃহস্পতিবার রাতে আশুগঞ্জ থানা থেকে আরাফাতের মৃত্যুর বিষয়টি তাদের জানানো হয়।
পরিবারটির দাবি, সৌদি প্রবাসী নোমানের পরামর্শে শরীফপুর এলাকার ইয়াছিন এক তরুণী ও আরফাতকে সঙ্গে নিয়ে আশুগঞ্জে হযরতের বাড়িতে গিয়ে ওঠে। সেখানে আরাফাতকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এ বিষয়ে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাড়িতে অবস্থানকারী এক তরুণীকে আটক করা হয়।
গেলো বছরের ২৪ মে ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ নেতা ইকরাম আহমেদ খুন হয়েছেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকায় আরেক ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে রায়হান নামের এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। নিহত ইকরাম সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামের মাছুদ আহমেদের ছেলে। তবে ইকরাম পরিবারের সঙ্গে জেলা শহরের কালাইশ্রীপাড়া ডা. ফরিদুল হুদা সড়কের একটি বাড়িতে থাকতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় ইকরাম কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রিদওয়ান আনসারির বাসায় ছিলেন। আটক রায়হান ঢাকার মগবাজার এলাকার জিয়াউল হকের ছেলে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দাবি, রায়হান মাদকাসক্ত।
নানা অপরাধে জড়িয়ে কিশোররা ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মদদ দিচ্ছে। ‘হিরোইজম’ প্রকাশ করতেও পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে। আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, প্রেমের বিরোধ, মাদকসহ নানা অপরাধে কিশোররা খুনাখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে। কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ‘বড় ভাই’রা।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহরে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা খুনাখুনি, মাদক, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা খুন, ছিনতাই-চাঁদাবাজি, শ্লীলতাহানি ও ইভটিজিং এবং মাদক ব্যবসার মতো অপরাধে বেশি জড়াচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের নিয়ন্ত্রক বা পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় সমাজের কিছু ‘বড় ভাই’ রয়েছে।
জানা গেছে, গ্রেফতার কিশোরদের দেশের তিনটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবি অপ্রতুল। অধিকাংশ কিশোরই হত্যা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক, অস্ত্র ও বিস্ফোরক, নারী ও শিশু নির্যাতন, পর্নোগ্রাফি, তথ্যপ্রযুক্তি মামলার আসামি।
বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিদিনই ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, জমিদখল, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, ধর্ষণ এবং খুন-খারাবি ইত্যাদি অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এদের অত্যাচার নির্যাতনে সমাজ বিষিয়ে উঠেছে। মানুষ অস্বস্তিকর অশান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। সমাজের নিরীহ অংশ বিশেষ করে যাদের কোনো প্রভাব প্রতিপত্তি নেই বা প্রভাবশালী মহলের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক ও যোগাযোগ নেই তাদের আতঙ্কই বেশি। তারা তাদের সহায়-সম্পদ ও উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটায়; কখন কারা জায়গা-জমি দখল করতে আসে বা চাঁদা দাবি করে অথবা স্কুল-কলেজে পড়ুয়া মেয়েটিকে কখন কোন বখাটে বিরক্ত করে বা স্কুলে যাওয়া ছেলেটিকে তাদের গ্যাংয়ের দলে ভিড়িয়ে ফেলে। এ ছাড়া এসব গ্যাংয়ের উৎপাতে পাড়ায় পাড়ায় মারামারি কাটাকাটি তো লেগেই আছে। এই কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি বর্তমানে তরুণদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। হিরোইজম বা বাহাদুরি, কাঁচা টাকা-পয়সা, মাদকাসক্তি, সাংস্কৃতিক চর্চার নামে সস্তা ছেলে-মেয়েদের অবাধে মেলামেশার তীব্র আকর্ষণ ইত্যাদি হাতছানি দিয়ে ডাকায় দ্রুত এ সমস্ত গ্যাং এবং তাদের সদস্যসংখ্যা বাড়ছে।
ফলে সমাজকে ভেতরে ভেতরে উইপোকার মতো খুবলে খেয়ে ফেলছে এই অশুভ চর্চা। উঠতি বয়সের, স্কুল-কলেজগামী কিশোরদের একটি অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ওই দিকেই ঝুঁকছে। ফলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সুড়ঙ্গের অপরপ্রান্তে জমা হচ্ছে নিকষকালো অন্ধকার। যারা এই জাতিকে আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে তারা যদি এই আগ্রাসী কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির চর্চা করে বেড়ে ওঠে তবে আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ সত্যিই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে। সুতরাং আজকের কিশোর গ্যাং কালচার দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শহুরে জীবনের পাড়ায় পাড়ায় কিশোর-তরুণরা প্রথমে ছোট ছোট গ্রুপ করে ‘স্টার বন্ড’, ‘সাইজ কইরা দে’, ‘আমিই বস’ ইত্যাদি উদ্ভট অথচ রোমাঞ্চকর গ্রুপের নামে আড্ডারাজি শুরু করে। ধীরে ধীরে শুরু হয় ছোট ছোট দলগত অপরাধকর্ম ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার বা দলগত সেরা হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া। অন্য দল বা অন্য এলাকার কিশোরদের ওপর প্রভাবশালী হয়ে উঠার এক রোমাঞ্চকর স্বাদ তারা পেয়ে যায় কাউকে মারধর করে বা অপমান করে।
ভিকটিমরাও তখন প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে ঘটে যায় খুনের ঘটনা। জড়িত হয়ে পড়ে স্থানীয় নেতারাও। তারা ‘বড় ভাই’ হিসেবে আগলে রাখেন গ্যাংগুলোকে। বিনিময়ে নিজেদের আর্থরাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে থাকেন এসব গ্যাংকে। গ্যাংয়ের সদস্যরাও ‘বড় ভাই’দের শেল্টারে থেকে নির্বিঘ্নে করে যায় নানা অপরাধ। ‘বড় ভাই’য়েরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্পর্শ থেকে আগলে রাখে গ্যাংয়ের সদস্যদের। এভাবে একটি কিশোর গ্যাং জন্ম নিয়ে দাপটের সাথে এলাকায় বিস্তার করে ‘অপরাধ সাম্রাজ্য’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, কিশোর গ্যাং কালচারের সঙ্গে জড়িতরা পর্যায়ক্রমে আলাদা আলাদা গ্রুপ তৈরি করে। তাদের ড্রেস কোড থাকে, আলাদা হেয়ার স্টাইল থাকে, তাদের চালচলনও ভিন্ন। তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। তারা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। নানাভাবে তারা অর্থ সংস্থানের চেষ্টা করে। এলাকার কোনো ‘বড় ভাই’র সহযোগী শক্তি হিসেবেও তারা কাজ করে।
সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, কিশোরদের একত্রিত করে কতিপয় ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত করছেন। তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে। সহজ ও অল্প খরচে কিশোরদের দিয়ে তারা অপরাধ করানোর সুযোগ নিচ্ছে। অস্ত্রবাজি, মাদক ও হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তারা কিশোরদের ব্যবহার করে। এছাড়া কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। এটি হল কিশোর গ্যাং তৈরির একটি দিক। অন্য আরেকটি দিক হল- আমাদের দেশে শিশুদের লালনপালন করার ক্ষেত্রে পরিবারগুলো শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য বিষয়ে যথাযথভাবে দায়িত্বপালন করছে না। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা অপরাধে জড়ায় এমন একটি কথা সমাজে প্রচলিত আছে। এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও অপরাধে জড়াচ্ছে। সঠিক ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে কিশোরদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা তৈরি হচ্ছে। এগুলো প্রশমিত না হওয়ায় তারা নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। এসব কারণ বিশ্লেষণ করে সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ না নিলে কিশোর অপরাধ কমানো সম্ভব নয়।
আরেকটি বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে, তা হচ্ছে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র। প্রচলিত আইনে ১৮ বছরের নিচে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় তাদের বড় কোনো শাস্তির পরিবর্তে পাঠানো হচ্ছে গাজীপুরে অবস্থিত কিশোর সংশোধনাগারে। যেসব কিশোরের সংশোধনাগারে নেওয়া হচ্ছে, তাদের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা আছে কি? একজন কিশোর সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে এসে যদি আবার খারাপ অপরাধে জড়িয়েই পড়ে তবে তা আমাদের জন্য চরম ব্যর্থতা। প্রয়োজনে আইন সংস্কার এবং কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা এ দুই বিষয় নিয়েও আমাদের ভাবার অবকাশ থেকে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উদাসিতা ও রাজনৈতিক বড়ভাইদের তদবির অনেকটা দায়ী বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ।
আদিত্য কামাল
আখাউড়ার চাঞ্চল্যকর শরীফ খাঁ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি জাকির খাঁকে (৪০) গ্রেফতার করেছে আখাউড়া থানা পুলিশ।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভোরে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে রাজধানীর শাহাজাহানপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ মামলার অন্য পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মাহবুব খাঁ (৩০) ও গাজী খাঁ (৬৫)। এছাড়া, আমানত খাঁকে (৬৫) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাঁচ আসামির মধ্যে অন্যতম আমির খাঁ মারা গেছেন। আখাউড়া থানা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চানপুর গ্রামে ২০১৫ সালের ৬ আগস্টে শরীফ খাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে চাঞ্চল্যকর ওই হত্যা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত। হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে পলাতক জাকির খাঁ’কে অবশেষে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলো আখাউড়া থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুল ইসলাম জানান, ৮ বছর পর চাঞ্চল্যকর শরীফ খাঁ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি জাকির খাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ মামলায় অন্য দুই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট আসামিরা শরীফ খাঁকে পারিবারিক ও সম্পত্তিজনিত কারণে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। উল্লেখ্য, গ্রেফতার আসামি জাকিরের বিরুদ্ধে আখাউড়া থানায় ১টি মাদক, ১টি নারী শিশু ও ১টি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা রয়েছে।
মোঃ হাসান লিটন
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণে মো. তারেক (২৩) নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে চাচা হাফেজ গংদের বিরুদ্ধে। গত শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে শশীভূষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ড হানিফ মিস্ত্রি’র বাড়িতে প্রতিবন্ধী যুবককে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে আহত যুবক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। প্রতিবন্ধী যুবক তারেক ওই বাড়ির মোহাম্মদ সিদ্দিকের ছেলে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবক তারেক জানান, রসুলপুর ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ড আমাদের নিজ বাড়িতে এ-র আগে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার মা ও চাচীর সাথে ঝগড়া বিবাদ হলে তার ফয়সাল করার জন্য গত শনিবার সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা আমাদের বাড়ির উঠানে বসেন। এরপর সালিসি শেষের একপর্যায়ে আমার চাচা মো. হাফেজ উত্তেজিত হয়ে আমার গালে থাপ্পর মারেন। কেন আমাকে থাপ্পড় মারলো তা জিজ্ঞেস করা মাত্রই আমার অন্য চাচা ইয়াছিন, অলু, এবং ফুফু ছফুরা, ও রাসেদা একাত্রিত হয়ে ফের আমাকে বেধড়ক মারধর করে। আমি মাটিতে পড়ে গেলে আমার মা আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে রওনা হলে পথিমধ্যে তারা আমাকে ও আমার মাকে বাধা দেয়। এরপর ঘটনার একদিন পর শারীরিক অবস্থা বেগতিক দেখে তাদের ভয়ে পালিয়ে রোববার বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। বর্তমানে আমি চিকিৎসাধীন রয়েছি। এসব সততা নিশ্চিত করে আহত যুবকের মা বিনু বেগম জানান, আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে মারধর করার সময় আমি বাধা দেওয়ায় আমাকেও দেবর হাফেজ মারধর করে। এবং আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য নিলে আমাকে দেখিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। বর্তমানে আমার ছেলেকে পালিয়ে নিয়ে এসে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমি এর সঠিক বিচার চাচ্ছি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাফেজ গংদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ভাতিজা তারেক আমাদের সাথে অন্যায় করায় তাকে একটা থাপ্পর মারছি। তাবে বড় ভাই সিদ্দিকের স্ত্রী বিনু বেগমকে মারধরের কথা অস্বীকার করেন তারা। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রফিক বলেন,প্রতিবন্ধী যুবককে মারধর করা তাদের অন্যায় হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠ সমাধান করে দিবো। শশীভূষণ থানার(ওসি) মু. এনামুল হক বলেন, প্রতিবন্ধী যুবকে মারধর করে অন্যায় করেছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি।।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানাধীন চরআইচা খাদেমুল ইসলাম নূরানী ও হাফেজী মাদ্রাসায় সমাপনী পরীক্ষায় উত্তির্ন কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯ টার সময় চরমানিকা ইউনিয়ন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লুৎফর রহমান তালুকদার বাড়ির দরজার মাদ্রাসা চত্বরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সুধীজন অংশ নেন। এসময় মাদ্রাসার মোহতালিম মুফতি আবু বক্করের সঞ্চালনয় মাদ্রাসার জমিদাতা আতাহার তালুকদারের সভাপতিত্বে রাব্বানিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা ইব্রাহিম খলিল, নীলিমা জ্যাকব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছির উদ্দীন আরিফ, জাবেরা খাতুন গালাস স্কুলের সহকারী শিক্ষক মাষ্টার হারুন, দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, মৌলভী মো. বিল্লাল হোসেন, মওলানা শোহেভ, এবং সাংবাদিক সেলিম রানা, জুলফিকার তালুকদার, হাসান লিটন ও ব্যবসায়ী শাহিন হাওলাদার সহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দক্ষিণ আইচা মায়ের দোয়া ব্যাটারী হাউজের প্রোপাইটার মো. বেল্লাল হোসেনের পক্ষ থেকে ১৫ জন কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পরিশেষে দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন আবু মাতব্বর বাড়ির দরজার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা নুরইসলাম কারি। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অভিভাবকসহ সুধীজন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে তবারকের আয়োজন করেন মায়ের দোয়া ব্যাটারী হাউজ।