স্বত্ব © 2024 দৈনিক পত্রিকা |
সম্পাদক ও প্রকাশক: উবায়দুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ জুয়েল মিয়া প্রতিষ্ঠাতা: পি বা লিজন।সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়- পাইকপাড়া,লোকনাথ দিঘীর পাড়,পৌর কমিউনিটি সেন্টার ২য় তলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।দৈনিক পত্রিকা অনলাইন নিউজ পোর্টাল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃক নিবন্ধনের জন্য প্রক্রিয়া দিন।newsdainikpatrika@gmail.com মোবাইল নাম্বার 01751406352,01715958768
আদিত্ব্য কামাল,জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : জতীয় মানবাধিকার সোসাইটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার উদ্যোগে শতাধিক অসহায় পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া টেংকের পাড়স্থ পৌর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এ ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ খোকনের উপস্থাপনায় ও জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছেল সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এড. তানভীর ভূঁইয়া সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবি সমিতি।বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জনাব মো. হেলাল উদ্দিন সহ-সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগ, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা নুরুজ্জামান পরিচালক হযরত শাহজালাল দারুল সুন্নাহ মাদ্রাসা মনতলা, এড. মাহবুবুল আলম খোকন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জেলা আওয়ামীলীগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জনাব ইস্কান্দার আলী সহ-সভাপতি জেলা নাগরিক কমিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জনাব আবদুস সালাম সহ-সভাপতি জেলা নাগরিক কমিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জনাব আব্দুল মান্নান সরকার সাবেক সাধারণ সম্পাদক দি-আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, মজিদ-নাহার ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি সাংবাদিক জাকারিয়া জাকির, জনাব মো. তাজুল ইসলাম সদস্য জেলা নাগরিক কমিটি, এড. শেখ জাহাঙ্গীর আলম, সভাপতি পিস ভিশন বাংলাদেশ, ফরেষ্ট রেইঞ্জার জনাব মো. বশির আহমেদ, রুমানা আক্তার শ্যামলী সভানেত্রী জেলা জাতীয় মহিলা পার্টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদিত্ব্য কামাল সম্পাদক জনতার খবর প্রমূখ।
দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানিমুখী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্ধর দিয়ে আবারো শুরু হচ্ছে মাছ রপ্তানী। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে মাছ, শুটকি, মাংস ও ফুড জাতীয় খাদ্য আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারী) থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আবোরো মাছ রপ্তানী শুরু হবে। এতে করে বন্দরে পুনরায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে কর্ম চাঞ্চলতা ফিরে আসবে বলে আশা করছে ব্যবসায়ীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানীকারক এসোসিয়েশসের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানান, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞার ফলে গেল বুধবার ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আগরতলায় মাছ রপ্তানী বন্ধ ছিল। এর আওতায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে মাছ রপ্তানীর বিষয়টি রাজ্য সরকারের নজরে এলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে টিঠি পাঠানো হয়।চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়, আগরতলা আইসিপিকে যেন এই তালিকার বাইরে রাখা হয়। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মন্ত্রীর সাথে কথা বলে নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে রাজ্যকে বাদ রাখার আহবান জানান। মন্ত্রীর আহবানের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।এতে করে গত ৫ দিন বন্ধ থাকার পর আবারো সোমবার থেকে মাছ রপ্তানী শুরু হবে। এতে করে মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত শত শত ব্যবসায়ী এই শ্রমিকরা তাদের কর্মসংস্থান ফিরে পাবে।আখাউড়া স্থলবন্দরেরর সুপারিন্টেনডেন্ট মোঃ সামাউল ইসলাম জানান, এই স্থলবন্দরটি রপ্তানি মুখি। বেশির ভাগই মাছ রপ্তানি হয়। কিন্তু ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া খাদ্য নিরাপত্তা জনিত কারন দেখিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত মাছ রপ্তানি বন্ধ রাখেন ভারতের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের আলোচনার মাধ্যমে ও রাজ্য সরকারের অনুরোধে ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ফেসাই) এই বন্দর দিয়ে মাছ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে পুনরায় মাছ রপ্তানির অনুমোদন দেই। মাছ রপ্তানি শুরু হলে বন্দরে রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রপ্তানিকারক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি দিন ৫০ থেকে ৬০ টন মাছ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সহ আশেপাশের সাতটি রাজ্যে রপ্তানি হয়। প্রতি কেজি মাছের রপ্তানি মূল্য আড়াই মার্কিন ডলার। প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ডলারের মাছ রপ্তানি হয়।
জুয়েল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
একটি গণতান্ত্রিক দেশে যে কোন রাজনৈতিক দল তার রাজতৈনিক কর্মকান্ড করতে পারে। তাতে আওয়ামীলীগ এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কোন আপত্তি নাই। কারণ আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আওয়ামীলীগ বাংলাদেশে গণতন্ত্র স্থাপন করেছে।’ শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি সংবিধান আছে। বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয় নির্বাচন কিভাবে হবে তা সম্পূর্ণ ভাবে লিখা আছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে।এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইন সচিব গোলাম সারোয়ার, পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন, আখাউড়া-কসবা সার্কেল (অতিরিক্ত) নবীনগর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সিরাজুল ইসলাম, আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রাশেদুল কাওসার ভূঁইয়া জীবন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. আব্দুল্লাহ ভূইয়া বাদল, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মমিন বাবুল, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বেগ শাপলু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন নয়ন প্রমুখ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
লহ্মীপুরে জেলা সদরে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া হাফিজ উল্যাহ ওরফে বাহাদুর মাঝি (৫৮) নামে এক বৃদ্ধকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে তার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড আদেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এডভোকেট জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাহাদুর মাঝি ৪০ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন। রায়ের সময় তিনি আদালতের উপস্থিত ছিলেন। বাহাদুর মাঝি সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের পূর্ব চররমনী মোহন গ্রামের মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে। আদালত ও এজাহার সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি ভোর রাতে অভিযান চালিয়ে সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়ের মধ্য চর রমনী মোহন গ্রামে স্থানীয় ইউপি সদস্য মনির হোসেন সজিবের বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ৮৫ হাজার ২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এসময় মনির, গ্রাম পুলিশ সদস্য মো. ইব্রাহিম ও যুবলীগ নেতা আমির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৪ জনের বিরুদ্ধে র্যা বব-১১ এর নোয়াখালী ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার (ডিএডি) মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বাহাদুর মাঝি ও আব্দুর রহমান নামে দুইজন পলাতক ছিলেন। পরে ৯ জানুয়ারি রাতে একই এলাকা থেকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবাসহ বাহাদুরকে গ্রেপ্তার করে । টেকনাফ সীমান্ত থেকে সমুদ্রপথে মাছ ধরার ট্রলারযোগে ইয়াবাগুলো নিয়ে আসেন তিনি। এ ঘটনায় পরদিন ১০ জানুয়ারি নোয়াখালী ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার (ডিএডি) মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে পৃথক আরও একটি মামলা দায়ের করেন। ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) লিটন চন্দ্র দত্ত আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন। প্রসঙ্গত, ইয়াবাকান্ডে প্রথম মামলায় চর রমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য(মেম্বার) মনির, ইউনিয়নের মো. ইব্রাহিম ও আমির হোসেন কারাগারে রয়েছে। সূত্রঃ বাসস
নিজস্ব প্রতিবেদক
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ সাংবাদিক সমিতি (কুভিকসাস) এর পালাবাদল হয়েছে। ১৩ জানুয়ারি সদ্য বিদায়ী সভাপতি আশিক ইরান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেয়া হয়। নতুন কমিটির সভাপতি আবু সুফিয়ান রাসেল এবং সাধারণ সম্পাদক সাফায়েত উল্লাহ মিয়াজী। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতি-কুভিকসাস এর কার্যনির্বাহী কমিটি-২০২৪ গঠন করা হয়েছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ধারা-৪ এর উপধারা (ঙ) অনুযায়ী সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নোক্ত ১১ সদস্যকে আগামী এক বছরের জন্য অনুমোদন দেয়া হলো। সভাপতি আবু সুফিয়ান রাসেল, সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সুমন, সাধারণ সম্পাদক সাফায়েত উল্লাহ মিয়াজী,যুগ্ম-সাধারণ আব্দুল্লাহ আল মারুফ,সাংগঠনিক সম্পাদক পুতুল আক্তার রলি,সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব মাহমুদ,দফতর সম্পাদক মাকছুদুর রহমান। নির্বাহী সদস্য:আল আমিন কিবরিয়া, হাসিবুল ইসলাম সজিব,সাইমুম ইসলাম অপি, সদস্য তাহমিনা আক্তার তুলি।২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কমিটি দায়িত্ব পালন করবেন। প্রসঙ্গত ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতি( কুভিকসাস) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। “বিবেকবান সাংবাদিক তৈরির প্রত্যয়” এই স্লোগানকে সামনে রেখে কলেজের ডিগ্রি শাখার প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার কার্যালয় থেকে পরিচালিত হয় সংগঠনটি। কলেজ অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ এ সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক। অধ্যক্ষ কর্তৃক নির্বাচিত দুইজন শিক্ষা কর্মকর্তা কুভিকসাসের উপদেষ্টা হিসাবপ দায়িত্বে আছেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
গেলো বছর (২০২৩) কিশোর অপরাধীদের হাতে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত বছরের ৯ জানুয়ারি জেলা শহরে ইজিবাইকের গতিরোধ করে আশিক নামের এক সাংবাদিককে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ৯ জানুয়ারি সোমবার সন্ধ্যার দিকে শহরের ফারুকী পার্ক সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং এর সক্রিয় সদস্য ঘাতক রায়হান আহমেদ সোহানকে জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ।
নিহত আশিকুর রহমান আশিক ‘দৈনিক পর্যবেক্ষণ’ পত্রিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। আশিক জেলা শহরের মেড্ডা এলাকার বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী আশরাফ উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় বাতিঘর নামের একটি মানবসেবামূলক সামাজিক সংগঠনের কর্মী ও ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাদক বিরোধী আন্দোলন’ এর সভাপতি ছিলেন। এবং জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সিফাত, সৌরভ, তৈয়ব, সাঈফ, রিজু’সহ মাদক বিরোধী প্রচার প্রচারণা চালাতেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম জানান, ‘বেওয়ারিশ লাশ স্বেচ্ছায় দাফন কাজের সঙ্গে জড়িত বাতিঘর নামক সংগঠনের মাসিক সভা ছিল শহরের ফারুকী পার্কে। সেখান থেকে সভা শেষ করে শহরে ফেরার পথে মাদকাসক্ত রায়হান’সহ আরও ৪-৫ জন আশিককে বহনকারী ইজিবাইকের গতিরোধ করে বুকের বাম পাশে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
গেলো বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা থেকে আরাফাত হোসেন (১৬) নামের এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আরাফাতের পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে আরাফাতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে জেলা শহরের ট্যাঙ্কের পাড় এলাকার বাসিন্দা।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, আশুগঞ্জের লালপুর এলাকার সৌদি প্রবাসী নোমানের পরামর্শে ইয়াছিন ও হযরত নামের দুই কিশোর পরিকল্পিতভাবে আরাফাতকে হত্যা করেছে। ঘটনার আগের দিন সকালে আরাফাত জন্মনিবন্ধনের কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরের দিন বৃহস্পতিবার রাতে আশুগঞ্জ থানা থেকে আরাফাতের মৃত্যুর বিষয়টি তাদের জানানো হয়।
পরিবারটির দাবি, সৌদি প্রবাসী নোমানের পরামর্শে শরীফপুর এলাকার ইয়াছিন এক তরুণী ও আরফাতকে সঙ্গে নিয়ে আশুগঞ্জে হযরতের বাড়িতে গিয়ে ওঠে। সেখানে আরাফাতকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এ বিষয়ে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাড়িতে অবস্থানকারী এক তরুণীকে আটক করা হয়।
গেলো বছরের ২৪ মে ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ নেতা ইকরাম আহমেদ খুন হয়েছেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকায় আরেক ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে রায়হান নামের এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। নিহত ইকরাম সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামের মাছুদ আহমেদের ছেলে। তবে ইকরাম পরিবারের সঙ্গে জেলা শহরের কালাইশ্রীপাড়া ডা. ফরিদুল হুদা সড়কের একটি বাড়িতে থাকতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় ইকরাম কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রিদওয়ান আনসারির বাসায় ছিলেন। আটক রায়হান ঢাকার মগবাজার এলাকার জিয়াউল হকের ছেলে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দাবি, রায়হান মাদকাসক্ত।
নানা অপরাধে জড়িয়ে কিশোররা ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মদদ দিচ্ছে। ‘হিরোইজম’ প্রকাশ করতেও পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে। আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, প্রেমের বিরোধ, মাদকসহ নানা অপরাধে কিশোররা খুনাখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে। কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ‘বড় ভাই’রা।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহরে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা খুনাখুনি, মাদক, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা খুন, ছিনতাই-চাঁদাবাজি, শ্লীলতাহানি ও ইভটিজিং এবং মাদক ব্যবসার মতো অপরাধে বেশি জড়াচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের নিয়ন্ত্রক বা পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় সমাজের কিছু ‘বড় ভাই’ রয়েছে।
জানা গেছে, গ্রেফতার কিশোরদের দেশের তিনটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবি অপ্রতুল। অধিকাংশ কিশোরই হত্যা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক, অস্ত্র ও বিস্ফোরক, নারী ও শিশু নির্যাতন, পর্নোগ্রাফি, তথ্যপ্রযুক্তি মামলার আসামি।
বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিদিনই ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, জমিদখল, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, ধর্ষণ এবং খুন-খারাবি ইত্যাদি অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এদের অত্যাচার নির্যাতনে সমাজ বিষিয়ে উঠেছে। মানুষ অস্বস্তিকর অশান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। সমাজের নিরীহ অংশ বিশেষ করে যাদের কোনো প্রভাব প্রতিপত্তি নেই বা প্রভাবশালী মহলের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক ও যোগাযোগ নেই তাদের আতঙ্কই বেশি। তারা তাদের সহায়-সম্পদ ও উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটায়; কখন কারা জায়গা-জমি দখল করতে আসে বা চাঁদা দাবি করে অথবা স্কুল-কলেজে পড়ুয়া মেয়েটিকে কখন কোন বখাটে বিরক্ত করে বা স্কুলে যাওয়া ছেলেটিকে তাদের গ্যাংয়ের দলে ভিড়িয়ে ফেলে। এ ছাড়া এসব গ্যাংয়ের উৎপাতে পাড়ায় পাড়ায় মারামারি কাটাকাটি তো লেগেই আছে। এই কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি বর্তমানে তরুণদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। হিরোইজম বা বাহাদুরি, কাঁচা টাকা-পয়সা, মাদকাসক্তি, সাংস্কৃতিক চর্চার নামে সস্তা ছেলে-মেয়েদের অবাধে মেলামেশার তীব্র আকর্ষণ ইত্যাদি হাতছানি দিয়ে ডাকায় দ্রুত এ সমস্ত গ্যাং এবং তাদের সদস্যসংখ্যা বাড়ছে।
ফলে সমাজকে ভেতরে ভেতরে উইপোকার মতো খুবলে খেয়ে ফেলছে এই অশুভ চর্চা। উঠতি বয়সের, স্কুল-কলেজগামী কিশোরদের একটি অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ওই দিকেই ঝুঁকছে। ফলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সুড়ঙ্গের অপরপ্রান্তে জমা হচ্ছে নিকষকালো অন্ধকার। যারা এই জাতিকে আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে তারা যদি এই আগ্রাসী কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির চর্চা করে বেড়ে ওঠে তবে আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ সত্যিই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে। সুতরাং আজকের কিশোর গ্যাং কালচার দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শহুরে জীবনের পাড়ায় পাড়ায় কিশোর-তরুণরা প্রথমে ছোট ছোট গ্রুপ করে ‘স্টার বন্ড’, ‘সাইজ কইরা দে’, ‘আমিই বস’ ইত্যাদি উদ্ভট অথচ রোমাঞ্চকর গ্রুপের নামে আড্ডারাজি শুরু করে। ধীরে ধীরে শুরু হয় ছোট ছোট দলগত অপরাধকর্ম ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার বা দলগত সেরা হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া। অন্য দল বা অন্য এলাকার কিশোরদের ওপর প্রভাবশালী হয়ে উঠার এক রোমাঞ্চকর স্বাদ তারা পেয়ে যায় কাউকে মারধর করে বা অপমান করে।
ভিকটিমরাও তখন প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে ঘটে যায় খুনের ঘটনা। জড়িত হয়ে পড়ে স্থানীয় নেতারাও। তারা ‘বড় ভাই’ হিসেবে আগলে রাখেন গ্যাংগুলোকে। বিনিময়ে নিজেদের আর্থরাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে থাকেন এসব গ্যাংকে। গ্যাংয়ের সদস্যরাও ‘বড় ভাই’দের শেল্টারে থেকে নির্বিঘ্নে করে যায় নানা অপরাধ। ‘বড় ভাই’য়েরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্পর্শ থেকে আগলে রাখে গ্যাংয়ের সদস্যদের। এভাবে একটি কিশোর গ্যাং জন্ম নিয়ে দাপটের সাথে এলাকায় বিস্তার করে ‘অপরাধ সাম্রাজ্য’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, কিশোর গ্যাং কালচারের সঙ্গে জড়িতরা পর্যায়ক্রমে আলাদা আলাদা গ্রুপ তৈরি করে। তাদের ড্রেস কোড থাকে, আলাদা হেয়ার স্টাইল থাকে, তাদের চালচলনও ভিন্ন। তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। তারা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। নানাভাবে তারা অর্থ সংস্থানের চেষ্টা করে। এলাকার কোনো ‘বড় ভাই’র সহযোগী শক্তি হিসেবেও তারা কাজ করে।
সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, কিশোরদের একত্রিত করে কতিপয় ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত করছেন। তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে। সহজ ও অল্প খরচে কিশোরদের দিয়ে তারা অপরাধ করানোর সুযোগ নিচ্ছে। অস্ত্রবাজি, মাদক ও হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তারা কিশোরদের ব্যবহার করে। এছাড়া কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। এটি হল কিশোর গ্যাং তৈরির একটি দিক। অন্য আরেকটি দিক হল- আমাদের দেশে শিশুদের লালনপালন করার ক্ষেত্রে পরিবারগুলো শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য বিষয়ে যথাযথভাবে দায়িত্বপালন করছে না। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা অপরাধে জড়ায় এমন একটি কথা সমাজে প্রচলিত আছে। এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও অপরাধে জড়াচ্ছে। সঠিক ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে কিশোরদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা তৈরি হচ্ছে। এগুলো প্রশমিত না হওয়ায় তারা নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। এসব কারণ বিশ্লেষণ করে সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ না নিলে কিশোর অপরাধ কমানো সম্ভব নয়।
আরেকটি বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে, তা হচ্ছে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র। প্রচলিত আইনে ১৮ বছরের নিচে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় তাদের বড় কোনো শাস্তির পরিবর্তে পাঠানো হচ্ছে গাজীপুরে অবস্থিত কিশোর সংশোধনাগারে। যেসব কিশোরের সংশোধনাগারে নেওয়া হচ্ছে, তাদের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা আছে কি? একজন কিশোর সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে এসে যদি আবার খারাপ অপরাধে জড়িয়েই পড়ে তবে তা আমাদের জন্য চরম ব্যর্থতা। প্রয়োজনে আইন সংস্কার এবং কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা এ দুই বিষয় নিয়েও আমাদের ভাবার অবকাশ থেকে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উদাসিতা ও রাজনৈতিক বড়ভাইদের তদবির অনেকটা দায়ী বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ।