স্বত্ব © 2024 দৈনিক পত্রিকা |
সম্পাদক ও প্রকাশক: উবায়দুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ জুয়েল মিয়া প্রতিষ্ঠাতা: পি বা লিজন।সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়- পাইকপাড়া,লোকনাথ দিঘীর পাড়,পৌর কমিউনিটি সেন্টার ২য় তলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।দৈনিক পত্রিকা অনলাইন নিউজ পোর্টাল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃক নিবন্ধনের জন্য প্রক্রিয়া দিন।newsdainikpatrika@gmail.com মোবাইল নাম্বার 01751406352,01715958768
জুয়েল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও ভৈরবে পৃথক পৃথক অভিযানে ৪৮ কেজি গাঁজাসহ ০২ জন মাদক কারবারিকে আটক করেছে র্যাব-১৪, সিপিসি-২, ভৈরব ক্যাম্প। এসময় ০১ টি মাইক্রোবাস ও ০১টি পিকআপ জব্দ করা হয়েছে। রবিবার (০৯ এপ্রিল) সকাল ০৬.২০ ঘটিকায় কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানাধীন দুর্জয় মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আখাউড়া পৌরসভার দেবগ্রামের সামসুদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে মাদক কারবারি মনির হোসেন ভূঁইয়া(৪৮) কে আটক করা হয়। এসময় ০১ টি মাইক্রোবাস তল্লাশী করে ৩৬ কেজি গাঁজা এবং নগদ ৪হাজার ৫শত টাকা উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। একই দিন সকাল ০৮.৩০ ঘটিকায় অপর অভিযানে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানাধীন উজানভাটি হোটেলের সামনে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ঢাকাগামী লেন থেকে মাদক কারবারি মামুন হোসেন (৩৫)কে আটক করেন। তিনি লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার সাইনাল গ্রামের মোঃ হোসেন এর ছেলে। এসময় ১টি পিকআপ তল্লাশী করে ১২ কেজি গাঁজা উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। জানা যায়, র্যাব-১৪ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন ও দিক নির্দেশনায় এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আক্কাছ আলীর নেতৃত্বে র্যাব-১৪, সিপিসি-২, ভৈরব ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই অভিযানদ্বয় পরিচালনা করেন। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য এবং গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
আদিত্ব্য কামাল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিল্ডিং কনসালট্যান্ট এসোসিয়েশন এর আয়োজনে অসহায় হতদরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল ৩ টায় আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অসহায় হতদরিদ্রদের মাঝে এ কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। নান্দনিক উপস্থাপক আব্দুল মতিন শিপন এর উপস্থাপনায় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিল্ডিং কনসালট্যান্ট এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব মো. শফিকুল আলম চৌধুরী’র সভাপতিত্বে ও এতে উপস্থিত ছিলেন, ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল বাকী, সাধারণ সম্পাদক বিল্ডিং কনসালট্যান্ট এসোসিয়েশন। মো. আবু জামাল, প্রধান শিক্ষক আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। মোঃ আমিনুল ইসলাম আমির, প্রচার সম্পাদক বিল্ডিং এসোসিয়েশন কনসালট্যান্ট এসোসিয়েশন। ইঞ্জিনিয়ার মো. বিল্লাল মিয়া, অর্থ সম্পাদক বিল্ডিং কনসালট্যান্ট এসোসিয়েশন। ইঞ্জিনিয়ার সফিক সরকার, ইঞ্জিনিয়ার তানভীর সবুর, ইঞ্জিনিয়ার মোদাচ্ছের, ইঞ্জিনিয়ার আলী ইবনে ইদ্রিস, ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার হেলাল আবির, নারী সংগঠক কোহিনূর আক্তার প্রিয়া, জনতার খবর এর সম্পাদক আদিত্ব্য কামাল প্রমুখ।
নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
গেলো বছর (২০২৩) কিশোর অপরাধীদের হাতে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত বছরের ৯ জানুয়ারি জেলা শহরে ইজিবাইকের গতিরোধ করে আশিক নামের এক সাংবাদিককে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ৯ জানুয়ারি সোমবার সন্ধ্যার দিকে শহরের ফারুকী পার্ক সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং এর সক্রিয় সদস্য ঘাতক রায়হান আহমেদ সোহানকে জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ।
নিহত আশিকুর রহমান আশিক ‘দৈনিক পর্যবেক্ষণ’ পত্রিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। আশিক জেলা শহরের মেড্ডা এলাকার বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী আশরাফ উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় বাতিঘর নামের একটি মানবসেবামূলক সামাজিক সংগঠনের কর্মী ও ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাদক বিরোধী আন্দোলন’ এর সভাপতি ছিলেন। এবং জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সিফাত, সৌরভ, তৈয়ব, সাঈফ, রিজু’সহ মাদক বিরোধী প্রচার প্রচারণা চালাতেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম জানান, ‘বেওয়ারিশ লাশ স্বেচ্ছায় দাফন কাজের সঙ্গে জড়িত বাতিঘর নামক সংগঠনের মাসিক সভা ছিল শহরের ফারুকী পার্কে। সেখান থেকে সভা শেষ করে শহরে ফেরার পথে মাদকাসক্ত রায়হান’সহ আরও ৪-৫ জন আশিককে বহনকারী ইজিবাইকের গতিরোধ করে বুকের বাম পাশে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
গেলো বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা থেকে আরাফাত হোসেন (১৬) নামের এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আরাফাতের পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে আরাফাতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে জেলা শহরের ট্যাঙ্কের পাড় এলাকার বাসিন্দা।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, আশুগঞ্জের লালপুর এলাকার সৌদি প্রবাসী নোমানের পরামর্শে ইয়াছিন ও হযরত নামের দুই কিশোর পরিকল্পিতভাবে আরাফাতকে হত্যা করেছে। ঘটনার আগের দিন সকালে আরাফাত জন্মনিবন্ধনের কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরের দিন বৃহস্পতিবার রাতে আশুগঞ্জ থানা থেকে আরাফাতের মৃত্যুর বিষয়টি তাদের জানানো হয়।
পরিবারটির দাবি, সৌদি প্রবাসী নোমানের পরামর্শে শরীফপুর এলাকার ইয়াছিন এক তরুণী ও আরফাতকে সঙ্গে নিয়ে আশুগঞ্জে হযরতের বাড়িতে গিয়ে ওঠে। সেখানে আরাফাতকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এ বিষয়ে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাড়িতে অবস্থানকারী এক তরুণীকে আটক করা হয়।
গেলো বছরের ২৪ মে ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ নেতা ইকরাম আহমেদ খুন হয়েছেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকায় আরেক ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে রায়হান নামের এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। নিহত ইকরাম সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামের মাছুদ আহমেদের ছেলে। তবে ইকরাম পরিবারের সঙ্গে জেলা শহরের কালাইশ্রীপাড়া ডা. ফরিদুল হুদা সড়কের একটি বাড়িতে থাকতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় ইকরাম কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রিদওয়ান আনসারির বাসায় ছিলেন। আটক রায়হান ঢাকার মগবাজার এলাকার জিয়াউল হকের ছেলে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দাবি, রায়হান মাদকাসক্ত।
নানা অপরাধে জড়িয়ে কিশোররা ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মদদ দিচ্ছে। ‘হিরোইজম’ প্রকাশ করতেও পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে। আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, প্রেমের বিরোধ, মাদকসহ নানা অপরাধে কিশোররা খুনাখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে। কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ‘বড় ভাই’রা।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহরে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা খুনাখুনি, মাদক, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা খুন, ছিনতাই-চাঁদাবাজি, শ্লীলতাহানি ও ইভটিজিং এবং মাদক ব্যবসার মতো অপরাধে বেশি জড়াচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের নিয়ন্ত্রক বা পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় সমাজের কিছু ‘বড় ভাই’ রয়েছে।
জানা গেছে, গ্রেফতার কিশোরদের দেশের তিনটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবি অপ্রতুল। অধিকাংশ কিশোরই হত্যা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক, অস্ত্র ও বিস্ফোরক, নারী ও শিশু নির্যাতন, পর্নোগ্রাফি, তথ্যপ্রযুক্তি মামলার আসামি।
বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিদিনই ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, জমিদখল, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, ধর্ষণ এবং খুন-খারাবি ইত্যাদি অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এদের অত্যাচার নির্যাতনে সমাজ বিষিয়ে উঠেছে। মানুষ অস্বস্তিকর অশান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। সমাজের নিরীহ অংশ বিশেষ করে যাদের কোনো প্রভাব প্রতিপত্তি নেই বা প্রভাবশালী মহলের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক ও যোগাযোগ নেই তাদের আতঙ্কই বেশি। তারা তাদের সহায়-সম্পদ ও উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটায়; কখন কারা জায়গা-জমি দখল করতে আসে বা চাঁদা দাবি করে অথবা স্কুল-কলেজে পড়ুয়া মেয়েটিকে কখন কোন বখাটে বিরক্ত করে বা স্কুলে যাওয়া ছেলেটিকে তাদের গ্যাংয়ের দলে ভিড়িয়ে ফেলে। এ ছাড়া এসব গ্যাংয়ের উৎপাতে পাড়ায় পাড়ায় মারামারি কাটাকাটি তো লেগেই আছে। এই কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি বর্তমানে তরুণদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। হিরোইজম বা বাহাদুরি, কাঁচা টাকা-পয়সা, মাদকাসক্তি, সাংস্কৃতিক চর্চার নামে সস্তা ছেলে-মেয়েদের অবাধে মেলামেশার তীব্র আকর্ষণ ইত্যাদি হাতছানি দিয়ে ডাকায় দ্রুত এ সমস্ত গ্যাং এবং তাদের সদস্যসংখ্যা বাড়ছে।
ফলে সমাজকে ভেতরে ভেতরে উইপোকার মতো খুবলে খেয়ে ফেলছে এই অশুভ চর্চা। উঠতি বয়সের, স্কুল-কলেজগামী কিশোরদের একটি অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ওই দিকেই ঝুঁকছে। ফলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সুড়ঙ্গের অপরপ্রান্তে জমা হচ্ছে নিকষকালো অন্ধকার। যারা এই জাতিকে আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে তারা যদি এই আগ্রাসী কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির চর্চা করে বেড়ে ওঠে তবে আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ সত্যিই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে। সুতরাং আজকের কিশোর গ্যাং কালচার দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শহুরে জীবনের পাড়ায় পাড়ায় কিশোর-তরুণরা প্রথমে ছোট ছোট গ্রুপ করে ‘স্টার বন্ড’, ‘সাইজ কইরা দে’, ‘আমিই বস’ ইত্যাদি উদ্ভট অথচ রোমাঞ্চকর গ্রুপের নামে আড্ডারাজি শুরু করে। ধীরে ধীরে শুরু হয় ছোট ছোট দলগত অপরাধকর্ম ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার বা দলগত সেরা হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া। অন্য দল বা অন্য এলাকার কিশোরদের ওপর প্রভাবশালী হয়ে উঠার এক রোমাঞ্চকর স্বাদ তারা পেয়ে যায় কাউকে মারধর করে বা অপমান করে।
ভিকটিমরাও তখন প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে ঘটে যায় খুনের ঘটনা। জড়িত হয়ে পড়ে স্থানীয় নেতারাও। তারা ‘বড় ভাই’ হিসেবে আগলে রাখেন গ্যাংগুলোকে। বিনিময়ে নিজেদের আর্থরাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে থাকেন এসব গ্যাংকে। গ্যাংয়ের সদস্যরাও ‘বড় ভাই’দের শেল্টারে থেকে নির্বিঘ্নে করে যায় নানা অপরাধ। ‘বড় ভাই’য়েরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্পর্শ থেকে আগলে রাখে গ্যাংয়ের সদস্যদের। এভাবে একটি কিশোর গ্যাং জন্ম নিয়ে দাপটের সাথে এলাকায় বিস্তার করে ‘অপরাধ সাম্রাজ্য’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, কিশোর গ্যাং কালচারের সঙ্গে জড়িতরা পর্যায়ক্রমে আলাদা আলাদা গ্রুপ তৈরি করে। তাদের ড্রেস কোড থাকে, আলাদা হেয়ার স্টাইল থাকে, তাদের চালচলনও ভিন্ন। তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। তারা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। নানাভাবে তারা অর্থ সংস্থানের চেষ্টা করে। এলাকার কোনো ‘বড় ভাই’র সহযোগী শক্তি হিসেবেও তারা কাজ করে।
সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, কিশোরদের একত্রিত করে কতিপয় ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত করছেন। তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে। সহজ ও অল্প খরচে কিশোরদের দিয়ে তারা অপরাধ করানোর সুযোগ নিচ্ছে। অস্ত্রবাজি, মাদক ও হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তারা কিশোরদের ব্যবহার করে। এছাড়া কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। এটি হল কিশোর গ্যাং তৈরির একটি দিক। অন্য আরেকটি দিক হল- আমাদের দেশে শিশুদের লালনপালন করার ক্ষেত্রে পরিবারগুলো শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য বিষয়ে যথাযথভাবে দায়িত্বপালন করছে না। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা অপরাধে জড়ায় এমন একটি কথা সমাজে প্রচলিত আছে। এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও অপরাধে জড়াচ্ছে। সঠিক ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে কিশোরদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা তৈরি হচ্ছে। এগুলো প্রশমিত না হওয়ায় তারা নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। এসব কারণ বিশ্লেষণ করে সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ না নিলে কিশোর অপরাধ কমানো সম্ভব নয়।
আরেকটি বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে, তা হচ্ছে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র। প্রচলিত আইনে ১৮ বছরের নিচে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় তাদের বড় কোনো শাস্তির পরিবর্তে পাঠানো হচ্ছে গাজীপুরে অবস্থিত কিশোর সংশোধনাগারে। যেসব কিশোরের সংশোধনাগারে নেওয়া হচ্ছে, তাদের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা আছে কি? একজন কিশোর সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে এসে যদি আবার খারাপ অপরাধে জড়িয়েই পড়ে তবে তা আমাদের জন্য চরম ব্যর্থতা। প্রয়োজনে আইন সংস্কার এবং কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা এ দুই বিষয় নিয়েও আমাদের ভাবার অবকাশ থেকে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উদাসিতা ও রাজনৈতিক বড়ভাইদের তদবির অনেকটা দায়ী বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ।
চট্রগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর সভার মেয়র নায়ার কবির। সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় তাকে এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) চট্রগ্রামে সার্কিট হাউসে এক অনুষ্ঠানে নায়ার কবিরের হাতে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার সম্মাননা তুলে দেন বিভাগীয় কমিশনার ডঃ মোঃ আমিনুর রহমান এনডিসি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে এবং চট্রগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ব্যবস্থাপনায় এই সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চট্রগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ডাঃ মোঃ আমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি। সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অধিকার, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে জেন্ডার বৈষম্যবিহীন স্বাবলম্বী ও বাসযোগ্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বর্তমান সরকার বিগত কয়েক বছর যাবৎ “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক এক অনন্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এবছর বিভাগীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় চট্রগ্রাম বিভাগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পেলেন।
মোঃ হাসান লিটন
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণে মো. তারেক (২৩) নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে চাচা হাফেজ গংদের বিরুদ্ধে। গত শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে শশীভূষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ড হানিফ মিস্ত্রি’র বাড়িতে প্রতিবন্ধী যুবককে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে আহত যুবক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। প্রতিবন্ধী যুবক তারেক ওই বাড়ির মোহাম্মদ সিদ্দিকের ছেলে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবক তারেক জানান, রসুলপুর ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ড আমাদের নিজ বাড়িতে এ-র আগে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার মা ও চাচীর সাথে ঝগড়া বিবাদ হলে তার ফয়সাল করার জন্য গত শনিবার সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা আমাদের বাড়ির উঠানে বসেন। এরপর সালিসি শেষের একপর্যায়ে আমার চাচা মো. হাফেজ উত্তেজিত হয়ে আমার গালে থাপ্পর মারেন। কেন আমাকে থাপ্পড় মারলো তা জিজ্ঞেস করা মাত্রই আমার অন্য চাচা ইয়াছিন, অলু, এবং ফুফু ছফুরা, ও রাসেদা একাত্রিত হয়ে ফের আমাকে বেধড়ক মারধর করে। আমি মাটিতে পড়ে গেলে আমার মা আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে রওনা হলে পথিমধ্যে তারা আমাকে ও আমার মাকে বাধা দেয়। এরপর ঘটনার একদিন পর শারীরিক অবস্থা বেগতিক দেখে তাদের ভয়ে পালিয়ে রোববার বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। বর্তমানে আমি চিকিৎসাধীন রয়েছি। এসব সততা নিশ্চিত করে আহত যুবকের মা বিনু বেগম জানান, আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে মারধর করার সময় আমি বাধা দেওয়ায় আমাকেও দেবর হাফেজ মারধর করে। এবং আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য নিলে আমাকে দেখিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। বর্তমানে আমার ছেলেকে পালিয়ে নিয়ে এসে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমি এর সঠিক বিচার চাচ্ছি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাফেজ গংদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ভাতিজা তারেক আমাদের সাথে অন্যায় করায় তাকে একটা থাপ্পর মারছি। তাবে বড় ভাই সিদ্দিকের স্ত্রী বিনু বেগমকে মারধরের কথা অস্বীকার করেন তারা। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রফিক বলেন,প্রতিবন্ধী যুবককে মারধর করা তাদের অন্যায় হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠ সমাধান করে দিবো। শশীভূষণ থানার(ওসি) মু. এনামুল হক বলেন, প্রতিবন্ধী যুবকে মারধর করে অন্যায় করেছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মো. সাকিব মিয়া (২৫) নামে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে উপজেলার তন্তর বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাকিব মিয়া কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের পুঠিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে।
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, শনিবার দুপুরে কসবা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ামুখী মোটারসাইকেলটির বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সিএনজি চালিত অটোরিশার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই সাকিব মারা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান ওসি।